পুণ্ড্রের পাঁচালী-২০ (বাঙালির গৌরব গাঁথা- তৃতীয় পর্ব )


পুণ্ড্রের পাঁচালী-২০ (বাঙালির গৌরব গাঁথা- তৃতীয় পর্ব )
সাজেদুর রহমান
গঙ্গার তীরবর্তী মহাসভ্যতা

চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য। ব্যাবসা-বাণিজ্যে বিখ্যাত বাঙালির গৌরবোজ্জ্বল প্রাচীন ইতিহাসের এক দুর্দান্ত দুঃসাহসী নৃপতি। গোপন মিশনে গুরু চানক্কের সাথে ঘুরে বেড়িয়েছেন পুণ্ড্র থেকে পাটালিপুত্রে। বিচিত্র তার জীবন। অদ্ভুত রহস্যময় তার গতিবিধি। কমলে কঠিন মেশানো নিষ্ঠুর এক অন্তর।             
একা। টানে সবাইকে, কিন্তু বিশ্বাস করেন না। ননদ রাজ ধানানন্দের অন্যায় অবিচার অত্যাচার দেখে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। পদে পদে তার বিপদ শিহরন ভয় আর মৃত্যুর হাতছানি। আসুন এই দুর্ধর্ষ দক্ষ সম্রাটের সঙ্গে পরিচিত হই। যিনি মাত্র কুড়ি (২০) বছর বয়সে রাজা হন।
এবং ২০ বছর রাজত্ব করেন। এই সময়ে অখণ্ড ভারত বর্ষে একক সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। যার ভয়ে আলেকজাণ্ডারের সৈন্য ভারতবিজয়ে অগ্রসর হতে চায়নি। গঙ্গার তীরবর্তী মহাসভ্যতা গঙ্গারিডি রাজ্যের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস এক টানে তুলে নিয়ে যাবে বিপুল প্রাণ শক্তির আশ্চর্য মায়াবী জগতে।
পুণ্ড্রের পাঁচালির বিংশ অনুচ্ছেরে গৌরব গাঁথার তৃতীয় পর্বে আপনি আমন্ত্রিত। এই সাথে বলে নেই প্রাইম সংখ্যা কুড়ি (২০)কুড়ি (২০) সংখ্যাটি বাংলার নিয়তির একটি আশ্চর্য জাদুকরী সংখ্যা। নৃবিজ্ঞানীদের মতে, বাংলাদেশের পলিমাটির বয়স ২০ হাজার বছরের প্রাচীন
বাংলা দার্শনিক মহর্ষি কপিলের সাংখ্য দর্শনে ২০একাদশেন্দ্রিয়। এর মধ্যে পাঁচটি কর্মেন্দ্রিয় অর্থাৎ বাক্‌ পাণি, পাদ, পায়ু, উপস্থ। পাঁচটি জ্ঞানেন্দ্রিয়, অর্থাৎ চক্ষু কর্ণ নাসিকা জিহ্বা ত্বক এখানে বলে রাখা প্রয়োজন যে পশ্চিমের যাবনিক বিজ্ঞান অনেক পরে এই পাঁচ জ্ঞানেন্দ্রিয়ের কথা জেনেছে এবং মেনেছে। এবং একটি অন্তরেন্দ্রিয়, একে পশ্চিমীরা অনেকসময় সিক্সথ সেন্স বা ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলে।
মজার বিষয় আলেকজান্ডার ২০ বছর বয়ষে, পিতা ফিলিপ-২ কে, নিজের মায়ের সংগে পরামর্শ করে বিষ খাইয়ে মেরে রাজা হয়েছিলেন ম্যসিডোনিয়ার
সম্রাট চন্দ্রগুপ্তের দরবার

ক) পুণ্ড্রের রাজা অখণ্ড ভারতের প্রথম সম্রাট 

কুড়ি সংখ্যাটি সম্রাট চন্দ্রগুপ্তের প্রিয়। তিনি যখন দরবারে বসেন, তখন তাঁর সঙ্গী থাকে কুড়ি জন। খাবার খেতে যখন বসেন তখনো উনিশজনকে নিয়েই বসেন। তাকে নিয়ে সবসময় সংখ্যা হয় কুড়ি। হাতে-পায়ের আঙুল কুড়িটি। মহামুনি কপিল     বিংশ সংখ্যা পছন্দ করেন। প্রভাতী দরবার বসেছে। এই আসরের চাণক্যের পরামর্শে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য পুরো মৌর্য সম্রাজ্যের একটি প্রশাসনিক কাঠামো দেন প্রথমে পুরো সাম্রাজ্যকে কয়েকটি প্রদেশে ভাগ করেন প্রদেশগুলোকে আবার অহর ও বিষয়ে (জেলা) ভাগ করেন বিষয়গুলো আবার কিছু গ্রামে বিভক্ত ছিলো -৫টি গ্রামের দায়িত্বে থাকতেন একজন করে গোপ এভাবে পুরো সাম্রাজ্যকে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রশাসনিক কাঠামোয় নিয়ে আসেন চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য, যা এর আগে আর কেউ পারেনি
খ্রিষ্ট পূর্ব ৩১৮ হতে ২৯৮ খ্রিষ্ট পূর্ব পর্যন্ত মোট ২৪ বছর রাজত্ব করেন চন্দ্রগুপ্ত চন্দ্রগুপ্তের পুরো শাসন ব্যবস্থাটি ছিলো একনায়কতান্ত্রিক রাজা যা বলতেন তাই হতো
সমগ্র উত্তর ভারত তখন ছোটো ছোটো রাজ্যে বিভক্ত এদের মধ্যে ষোলোটি রাজ্য বা মহাজনপদ সবচেয়ে শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল ষোলোটির মধ্যে একটি রাজ্য মগধ। এছাড়াও পুণ্ড্রসহ কয়েকটি রাজ্য ছিল উত্তর-পূর্ব ভারতে। এই সমস্তকে সর্ব প্রথম ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য এর আগে কোনও ভারতীয় রাজা তা করে দেখাতে পারেননি এই প্রথমই ভারতবর্ষ লাভ করে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রশাসনিক কাঠামো এই প্রশাসনিক কাঠামোর মাধ্যমেই মৌর্য সাম্রাজ্য লাভ করে একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা
এবার আসা যাক চন্দ্রগুপ্ত পুণ্ড্রের রাজা- এই তথ্যের উৎস কি? ব্যাপারটা তলিয়ে দেখলে বাংলার ইতিহাসে এক নতুন ডাইমেনশন তৈরি হয়।

যুক্তি- একঃ  কারো মতে গুপ্তগণ বাঙালি ছিলেন এবং প্রথমে বাংলাদেশেই রাজত্ব করতেন। ৬৭২ খ্রিস্টাব্দের দিকে ই-ৎসিঙ নামের একজন চৈনিক পর্যটক বাংলায় আসেন। তিনি তিন বছর তাম্রলিপ্তিতে অবস্থান করে সংস্কৃত ভাষা শেখেন। ই-ৎসিঙ একটি স্থাপত্যের ধ্বংসাবশেষ প্রত্যক্ষ করেন। চীনা মন্দিরনামে পরিচিত এর ভিতটি শুধু টিকে ছিল। মহাবোধি মন্দির থেকে এর দিক নির্দেশনা ও দূরত্ব সম্পর্কে তাঁর বর্ণনা থেকে এ মন্দিরটির অবস্থান উত্তরবঙ্গের (বরেন্দ্র) কোথাও ছিল বলে অনুমান করা হয়। ই-ৎসিঙ্ শুনতে পান যে, তাঁর ভ্রমণের ৫০০ বছর পূর্বে শ্রীগুপ্ত নামে একজন মহারাজা চৈনিক পুরোহিতদের জন্য এ মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। এ সময়ে প্রায় ২০ জন চৈনিক পুরোহিত তীর্থযাত্রায় এখানে এলে শ্রীগুপ্ত তাদের আচরণে মুগ্ধ হন এবং তাদেরকে কিছু জমি ও ২৪টি গ্রামের রাজস্ব দান করেন। কোনো কোনো ঐতিহাসিকের মতে, এ শ্রীগুপ্তই সম্ভবত গুপ্ত সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা শ্রীগুপ্ত।
এই চৈনিক পরিব্রাজক ইৎসিং-এর বিবরণের উপর নির্ভর করে ইতিহাসবিদ ডি. সি. গাঙ্গুলি অনুমান করেছেন যে, গুপ্তবংশীয় রাজাদের আদি বাসস্থান বাংলাদেশেই ছিলো। সেটা বাংলার উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে থাকতে পারে অনুমান করা হয়(বাংলাদেশের ইতিহাস, গ্রন্থকার: ফোর ডক্টরস)।
রমেশচন্দ্র মজুমদার সহ একাধিক ঐতিহাসিক মনে করছেন (দেবব্রত মালাকারের বইতে বিস্তারিত আলোচনা আছে) চীনদেশীয় পর্যটক ইৎ সিং বলছেন যে শ্রীগুপ্ত তার রাজ্যের মৃগস্থাপন স্তূপে (নালন্দা থেকে গঙ্গার তীর ধরে চল্লিশ যোজন পূর্বে) চীন দেশীয় শ্রমণদের জন্য একটি মন্দির নির্মাণ করিয়েছিলেন। এই মৃগস্থাপন স্তূপ ছিল বর্তমানের মালদা অথবা মুর্শিদাবাদ জেলায়। তবে এসব অভিমতের পক্ষে কোনো জোড়ালো যুক্তি বা তাথ্যিক প্রমাণ পাওয়া যায় নি (মজুমদার, প্রাগুক্ত, পৃঃ ৩৩-৩৪)।


যুক্তি- দুইঃ চন্দ্রগুপ্তের বংশ পরিচয় নিয়ে মতান্তর আছে প্রাচীন হিন্দু কিংবদন্তী থেকে জানা যায়, ইনি নন্দবংশের সন্তান ছিলেন অন্যমতে তাঁর মাতা (মতান্তরে মাতামহী) ছিলেন মুরা ছিলেন শুদ্রাণী এই মতে নন্দরাজের উপপত্নী মুরা'র সন্তানের মৌর্য নামে অভিহিত হয়েছে হিন্দু পুরাণ থেকে এই সাক্ষ্য পাওয়া যায় না পুরাণে বরং পাওয়া যায়, নন্দবংশের পতনের পর শূদ্র বংশের আরম্ভ হয়েছিল বৌদ্ধ গ্রন্থাদিতে মৌর্য বংশের রাজাদের ক্ষত্রিয় হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে অজাতশত্রুর পর মগধের রাজা নন্দবংশীয় মহানন্দের রাজত্বকালে মহামতি আলেকজান্ডার ভারত আক্রমণ করেন। মহানন্দের পুত্র চন্দ্রগুপ্ত জৈনধর্মের সমর্থক ছিলেন। চন্দ্রগুপ্তের পুত্র মহামতি অশেক ২৬৩ খ্রীষ্টপূবাব্দে রাজারোহন করেন। অধিকাংশ বিশেষজ্ঞের মতে সময়টা ২৮৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দের পূর্বে; কারণ এই সালে চন্দ্রগুপ্ত মারা যান। নন্দরাজা বাঙালি ছিলেন কিনা সে সম্বন্ধে সঠিক কিছু জানা যায়নি। 
যুক্তি-তিনঃ দিল্লীর কুয়াতুল ইসলাম মসজিদের প্রাঙ্গনে অবস্থিত লৌহ স্তম্ভগাত্রে ক্ষোদিত লিপি এই সময়কার বাংলার ইতিহাসে কিছুটা আলোকপাত করে। এই লিপিতে চন্দ্র নামধারী এক রাজার বিজয় কাহিনী লিপিবদ্ধ আছে। উল্লেখ করা আছে যে তিনি বঙ্গে তার শত্রূ নিধন করেছিলেন এবং বীর বঙ্গীয়রা তার বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিরোধের ব্যবস্থা করেছিলো।

যুক্তি- চারঃ  তিব্বতীয় বৌদ্ধ ঐতিহাসিক লামা তারানাথের গ্রন্থে এবং আরাকানের সিথাং মন্দিরের শীলালিপিতে চন্দ্র উপাধিধারী এক দীর্ঘকাল স্থায়ী রাজবংশের উল্লেখ পাওয়া যায়। এই রাজবংশের রাজারা বেশ ক্ষমতাশালী ছিলেন। তারানাথের মতে চন্দ্রবংশীয়দের রাজধানী চট্টগ্রামই ছিল। চন্দ্রবংশীয়দের পরে পালবংশ বাংলায় প্রভুত্ব বিস্তার করে।

যুক্তি- পাচঃ  গুপ্ত শব্দের অর্থ নিয়ে মতভেদ আছে; কেউ বলেন গুপ্ত অর্থে প্রচ্ছন্ন, কারও মতে এর অর্থ রক্ষিত, অর্থাৎ সহায়-সম্পন্ন, কেউ কেউ বলেন গুপ্ত অর্থে চন্দ্রগুপ্তের নাম করা হ্যেছে। যিনি (প্রথম গুপ্তসম্রাট শ্রীগুপ্ত) আসলে পুণ্ড্রবর্ধনের রাজা ছিলেন, এবং পরে তিনি মগধ জয় করে সেখানকার রাজা হন। প্রবল পরাক্রান্ত গুপ্তবংশের প্রতিষ্ঠাতা রাজা শ্রীগুপ্তর (সমুদ্রগুপ্তর পিতামহ মহারাজগুপ্ত আর শ্রীগুপ্ত একই ব্যক্তি, নীহাররঞ্জন বলছেন) আদি রাজ্য ছিল বারেন্দ্রভূমে, একটি বৌদ্ধ গ্রন্থে জানা যাচ্ছে।  
চন্দ্রকেতুগড়ের একাংশ 

খ) নতুন করে লিখতে হবে ইতিহাস

গ্রিকদূত মেগাস্থিনিস পাটলিপুত্রকে পলিবোথরা আর চন্দ্রগুপ্ত-এর নাম সান্দ্রোকোত্তাস বলেছেন। এই তত্ত সত্য হলে বাংলা তথা ভারতের ইতিহাস নতুন করে লিখতে হবে। আর তাতে বলা হবে, সুপ্রাচীন কালে সাম্রাজ্যের কেন্দ্রে থাকবে বাংলা, মগধ নয়৷      
ইন্ডিকায় বিবরণে সান্দ্রোকোত্তাস (Sandrocottus) বলে বর্ণনা করেছেন, তিনি চন্দ্রগুন্ত ছিলেন না, ছিলেন চন্দ্রকেতু৷ এই প্রেক্ষিতে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার চন্দ্রকেতুগড়ের স্থানীয় লকেদের ভাষ্য মতে চন্দ্রকেতু আসলে কিংবদন্তি রাজা ছিলেন৷ চন্দ্রকেতুগড়-এর ঢিবিতে প্রত্ন খননে বন্দর সভ্যতার অনেক নিদর্শন মিলেছে।
আইআইটি খড্গ়পুরের আর্কিটেকচার অ্যান্ড রিজিয়োন্যাল প্ল্যানিংয়ের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক জয় সেনে চন্দ্রকেতুগড়ে খ্রিস্টপূর্ব নগরায়ণের প্রমাণ পাওয়ার দাবি করেন। তিনি জানান, খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতক থেকে (আলেকজান্ডার ভারতে আসেন খ্রিস্টপূর্ব ৩২৬ সালে) পাল যুগ পর্যন্ত (দ্বাদশ শতক) এখানে যে টানা একটি সভ্যতাই ছিল, উত্খননে তার প্রমাণও পাওয়া গিয়েছে৷
আইআইটির অধ্যাপকমণ্ডলী, যার মধ্যে অধ্যাপক সেন ছাড়াও রয়েছেন জিয়োলজি অ্যান্ড জিয়োফিজিক্সের অধ্যাপক অরিন্দম বসু, অধ্যাপক প্রবাল সেনগুন্ত, অধ্যাপক অভিজিত্ মুখোপাধ্যায় প্রমুখ৷ তাদের বক্তব্য, সান্দ্রোকোত্তাস যে চন্দ্রকেতু ছিলেন, তার অনেক প্রমাণ আমরা পেয়েছি৷ বিভিন্ন সময়ে তিনটি ইন্ডিকা লেখা হয়েছিল৷ মেগাস্থিনিসের বিবরণ আমরা সংগ্রহ করেছি৷ এ ছাড়াও আমরা পড়েছি এরিয়েন এবং টলেমির বিবরণ৷ সেই বিবরণে নদীর যে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, তা নদিয়া জেলা৷ তবে বর্তমান নদিয়া নয়, পদ্মা যেখান থেকে ভেঙেছে, সেখান থেকে পাবনা হয়ে দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত৷ আমরা এমন অনেক প্রমাণই পেয়েছি, যা থেকে আমরা নিশ্চিত হতে পেরেছি, সান্দ্রোকোত্তাস আসলে চন্দ্রকেতুই; বললেন অধ্যাপক সেন৷
মৌর্য ও গুন্ত যুগের মাটির তৈরি পুরা নিদর্শন

এই দলটি চন্দ্রকেতুগড়ের এক কিলোমিটার উত্তরে বেড়াচাঁপায় খনা -মিহিরের ঢিপি নামে আরেকটি প্রত্ন স্থানের উল্লেখ করেছেন৷ সেখানে প্রাপ্ত ফলকে লেখা ইতিহাস নিয়ে আরও গবেষণা করতে হবে৷ রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় কাজ সম্পূর্ণ করতে পারেননি৷   
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশুতোষ সংগ্রহালয়ের উদ্যোগে চন্দ্রকেতুগড়ে নতুন করে উত্খনন ও অনুসন্ধান করা দরকার। ১৯০৭ সালে যে চন্দ্রকেতুগড়ের সন্ধান পাওয়া যায়, আজও তা পুরোপুরি উত্খনন করা হয়ে উঠল না৷ ১৯৬০ সালে এখান থেকে মৌর্য ও গুন্ত যুগের বিপুল পরিমাণে মাটির তৈরি পুরা নিদর্শন উদ্ধার হয়৷ তার পরও খনন হয়নি৷ কারণ ১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে এই বিষয়টি মোটেই গুরুত্ব পায়নি৷ তা ছাড়া পূর্ব পাকিস্তান (অধুনা বাংলাদেশ) তৈরি হওয়ার পরে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে খনন করা সম্ভবও ছিল না৷ রাজ্য সরকারও তখন এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়নি৷   
অধুনা পশ্চিম মেদিনীপুরে এখনও একটি মন্দির আছে৷ কথিত, সেই মন্দিরেই তাল -বেতালকে বশ করেছিলেন বিক্রমাদিত্য৷ পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন থেকে জানা গিয়েছে, বিক্রমাদিত্য নামে একজন নন, দুজন রাজা ছিলেন৷ কিন্ত্ত ইতিহাস গবেষকদের কাছে এখনও প্রশ্ন, কিংবদন্তি রাজা বিক্রমাদিত্যই কি দ্বিতীয় চন্দ্রগুন্ত?
অধ্যাপক সেন বলেন,  আইআইটির রিপোর্ট অনুযায়ী, এখানে খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতক অর্থাত্ মৌর্যপূর্ব যুগ থেকে পাল -সেন যুগ পর্যন্ত সময়কালের বিভিন্ন প্রত্ননিদর্শন মিলেছে৷

গ) মিথ্যের খড়ের গাঁদায় সত্য-সূচের অনুসন্ধান

পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন

বাংলার প্রাচীন ইতিহাস সম্বন্ধে খুব কম তথ্যই পাওয়া যায়। বিভিন্ন ধ্রুপদী সংস্কৃত, গ্রিক ও লাতিন সাহিত্য ও ঐতিহাসিক রচনা থেকে যা এক কথায় আবলতাবল ইতিহাস। দেখা যায় বিশ্বের আর দশটা দেশ ও জাতি থেকে বাঙ্গালির বেলায় আলাদা ভাবে অর্থাৎ স্বাভাবিক যা নয় সেইভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
এ কারণ – বাঙালিকে তারভ ইতিহাস তার হাত থেকে কেড়ে নেয়া হয়েছে রাষ্ট্র ক্ষমতা। আর তাই লক্ষ করি হিন্দু, বৌদ্ধ ও জৈন-সমাজে প্রথম মৌর্য্যসম্রাটু চন্দ্রগুপ্ত সম্বন্ধে যে সব প্রাচীন কাহিনী প্রচলিত আছে, তার সাথে পাশ্চাত্য গ্রীক-ঐতিহাসিকদের কোন সামঞ্জস্ত নাই।       
আর তাই দেখি আর্যরা যখন আমাদের অসুর, অসভ্য জাতি বলে গালি দিচ্ছে তখন গ্রীকরা গঙ্গারিড জাতি উন্নত সভ্য জাতি হিসেবে আমাদের প্রশংসা করছে। গ্রিক বীর যখন ভারতের অন্যান্য অঞ্চল জয়করে এসে গঙ্গারিড জাতি রাজা মহাপদ্ম নন্দের সামনে এসে থমকে গিয়ে বলছেন, রণ শক্তিতে এই জাতি সর্বশ্রেষ্ঠ।
এ থেকে সুস্পষ্টভাবে বোঝা যায় যে, সামরিক ক্ষেত্রে সেই সময় ভারতবর্ষ ছিলো পুরো বিশ্বে অদ্বিতীয় লোহা উৎপাদনে সেই সময় মগধের ধারে কাছেও কেউ ছিলো না
এই লোহা দিয়ে তৈরি হতো লাঙ্গল, কাস্তে, তবে সবচেয়ে বেশী যে কাজে ব্যবহৃত হতো তা হলো অস্ত্র তৈরি করা যুদ্ধের জন্য অস্ত্র খাদ্য শস্য উৎপাদনের চেয়ে অস্ত্র উৎপাদনই ছিলো তৎকালীন মুখ্য বিষয় প্রত্যেক রাজাই সিংহাসনে বসার পর রাজ্য জয়ের প্রতি সবচেয়ে বেশি নজর দিতেন
অশোকই  মগধের এই উত্থানে মূল ভূমিকা পালন করেন বিম্বিসার বিম্বিসারই মগধকে উত্তর ভারতের রাজনীতির কেন্দ্রে পরিণত করেন বিম্বিসারের পর তার পুত্র অজাতশত্রু ৪৯৪ খ্রিষ্ট পূর্বে মগধের সিংহাসনে আরোহণ করেন খ্রিষ্ট পূর্ব ৩৬৪ অব্দের দিকে নন্দ বংশের দখলে চলে যায় মগধ নন্দ বংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন মহাপদ্ম নন্দ পুরাণ অনুযায়ী এই মহাপদ্ম নন্দই বিভিন্ন জায়গায় ক্ষত্রিয়দের (পাঞ্চাল, কলিম, কাশী, অশ্মক, কুরু, সুরেন, মিথিলা ইত্যাদি) পরাজিত করে গড়ে তুলেন এক বিশাল সাম্রাজ্য
এদিকে অথর্ববেদে মগধের উল্লেখ পাই। তাতে বিহার এবং বাংলার অধিকাংশই মগধ রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিলো এই মগধকে কেন্দ্র করেই এক পর্যায়ে মৌর্য সাম্রাজ্য গড়ে ওঠে, আর চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য ছিলেন এই মৌর্য সাম্রাজ্যের প্রথম রাজা
এ ভাবে ইতিহাসের ঐতিহাসিক কিছু তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে বিশেষ করে
চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যমগধান সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হয়ে পুন্ড্রবর্ধন রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন যা বর্তমানে মহাস্থানগড় নামে পরিচিত তাঁর পৌত্র সম্রাট অশোক উত্তর ভারতজুড়ে এই রাজ্যের বিস্তৃতি ঘটানখ্রিষ্টীয় ৪র্থ শতকে উত্তর ভারত গুপ্তদের অধীনে আসে এদের শাসনামলে বৌদ্ধ ধর্ম সাফল্যের স্বর্ণশিখরে পৌঁছে হোয়াইট হানদের ক্রমাগত আক্রমণে একসময় গুপ্তরা পর্যুদস্ত হয়ে পড়ে ৬ষ্ঠ শতকে শশাংক বাংলায় গৌড় সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন অবশেষে যুদ্ধবাজ রাজা শ্রী হর্ষের হাতে এই সাম্রাজ্য উৎখাত হয় শ্রী হর্ষ ৮ম শতক পর্যন্ত বঙ্গ শাসন করেন


চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের সাম্রাজ্যের চাল-চিত্র 

আরেকটি অনুসন্ধানঃ  

মগধ চন্দ্র ও ধনানান্দের মধ্যে সম্পর্ক বিষয়ে আর্যদের বর্ণনায় যে হিবিজিবি পরচয় পাই তাতে, কোন কোন তথ্য নেবো সেটা ভাবার চেয়ে কোন সব ফেলে দেবো তাই নিয়েই বেশি ভাবতে হয়। যেমন- কোথাও বলা হচ্ছে ধনানান্দের সৎ ভাই চন্দ্রগুপ্ত। কোথাও দেখি ধনানান্দের অবৈধ সন্তান চন্দ্রগুপ্তে। আবার দেখি ধনানান্দের সৈন্যবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। একই অবস্থা তার জন্ম, বংশ পরিচয় নিয়ে।             
কেউ কেউ তাকে সান্দ্রোকোত্তাস (Sandrocottus) নাপিত-পুত্র বলেছেন। আবার কেউ আবার মনে করেন, মৌর্যরা ছিল আসলে ব্যাধ বা নিষাদ জাতীয় নীচু শ্রেণীর মানুষ শিকারের সাথে সাথে নানা রকম পশু পাখিও তারা পুষত বিশেষ করে ময়ূর তারা খুব ভালোবাসত ময়ূর থেকেও মৌর্য কথাটি আসতে পারে বলে অনেকে মনে করেন আর একটি মত বলছে, নেপালের পাদদেশে পীপ্পলিবন নামক এলাকার মোরীয় ক্ষত্রিয়কূলের সন্তান ছিলেন তিনি মোরীয় থেকে মৌর্য কথার উৎপত্তি তাঁর বাল্য জীবন সম্পর্কে প্রায় কিছুই জানা যায় না সবটাই জনশ্রুতি বা কিংবদন্তী তিনি না ক্ষত্রিয় না শুদ্র তা নিয়ে রয়েছে অনেক বিতর্ক
বৌদ্ধ গ্রন্থ মহাবংশে চন্দ্রগুপ্তকে মোরিয় নামক একটি ক্ষত্রিয় গোষ্ঠীর সন্তান বলে উল্লেখ করা হয়েছে মহাবংশটীকা অনুসারে, তাঁকে শাক্য ক্ষত্রিয় গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্কিত বলে বর্ণনা করা হয়েছে
মৌর্যকেন বসানো হয়েছিল তা নিয়ে আছে বহু মতভেদ, অনেক বিতর্ক কেউ কেউ বলেন তাঁর মা অথবা মাতামহীর নাম ছিল মুরা তিনি কোনও এক নন্দ রাজার দাসী ছিলেন মুরা থেকেই মৌর্য কথাটি এসেছে

দ্বিতীয় অনুসন্ধানঃ

চন্দ্ৰ-গুপ্তের আবির্ভাবে যে বংশ গৌরবান্বিত করেছিল, চন্দ্ৰ-গুপ্ত যে বংশে জন্মান তার আদি-পরিচয় একটি দুটি রেখা দেখি, একটি দুটি মানস-পরিস্থিতির কথা জানি। এক দুই বিদ্যমান ইঙ্গিত, আমাদের গড় চেহারার ভেতরের নমুনা, প্রত্ন সাক্ষ্য থেকে অতি অল্পই পরিচয় পাই।
সান্দ্রোকোত্তাসকেই পাশ্চাত্য-ইতিহাসবিদরা চাণক্য-প্রতিষ্ঠাপিত মৌর্য্য-সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত বলে স্বীকার করে আসছেন। কিন্তু অন্তত প্রমাণ করে দিয়েছেন, সান্দ্রোকোত্তাস মৌর্য্য সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত এক ব্যক্তি না। বৌদ্ধ ও জৈনগ্রন্থ এক সাথে আলোচনা করে আমরা বুঝিয়াছি, আলেক্সান্দরের সমসাময়িক সান্দ্রোকোত্তাসই মৌর্য্য-সম্রাটু চন্দ্রগুপ্তের পৌত্র অশোক।

তৃতীয় অনুসন্ধানঃ


গ্রিকদূত মেগাস্থিনিস 

চন্দ্রগুপ্তের জীবনকালের ৭০০ বছর পরে রচিত সংস্কৃত নাটক মুদ্রারাক্ষসে তাঁকে নন্দন্বয় বা নন্দের বংশধর হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে নন্দরাজ্যের রাণীর এক দাসী ছিল, যার নাম মুরা একদা নন্দরাজ দাসী মুরার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে তাঁকে ধর্ষণ করে তার গর্ভসঞ্চার করেন লোকলজ্জার ভয়ে নন্দরাজ মুরা ও তার সন্তানকে অস্বীকার করেন এতে ক্ষিপ্ত চন্দ্রগুপ্ত চাণক্যের সহায়তায় নন্দবংশ উৎখাত করে মৌর্য বংশ প্রতিষ্ঠা করেন
প্রত্নতত্ত্ববিৎ পণ্ডিতগণ এই মত নিয়ে ব্যাপক মতভেদ করেন। তাই গুপ্ত রাজগণের প্রতিষ্ঠা, বংশের উৎপত্তির ও বিস্তৃতির নানা অভিমত দাঁর করান। এর মধ্যে সব চেয়ে প্রবল মত হচ্ছে, ৩২২ খ্রিস্টপূর্বাব্দে এক শুদ্র রমণী মুরার নামে তার পুত্র চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য প্রতিষ্ঠা করেন মৌর্য সাম্রাজ্য।              

চতুর্থ অনুসন্ধানঃ

বাংলার ইতিহাসে দুতি গুপ্ত সাম্রাজ্যের অস্তিত্ব দেখি। এক সাম্রাজ্য খ্রিস্ট পূর্বের আরেকটি খ্রিষ্টীয় চতুর্থ অব্দে আর এই নিয়ে ইতিহাস বিদদের ঐতিহাসিক পেচাপেচি করেছেন।
মজার বিষয় দই শাসনামলে চন্দ্রগুপ্ত নামের নৃপতির উল্লেখ পাই। দুজনকেই বাংলা মূলকের অধিবাসী বলা হচ্ছে। আরো জটিলতা হয়, যখন দেখি খ্রিষ্টীয় চতুর্থ অব্দে কোন অধিপতি তার কথা খ্রিস্ট পূর্বের অধিপতি অশকের স্তম্ভে উৎকিরণ করেছেন।    
বিভিন্ন লিপির বংশলতায় মহারাজ গুপ্তকেই’, অনেকে গুপ্ত-বংশের প্রতিষ্ঠাতা বলে মনে করেন। গুপ্তের ও ঘটোৎকচের নামের সহিত মহারাজা’, আর তঁহাদের পরবর্তী রাজগণের নামের সাথে মহারাজাধিরাজউপাধি-দুষ্ট মনে হয়, গুপ্ত বা ঘটোৎকচ-কেউই একছত্ৰ-সমাট পদলাভ করিতে সমর্থ হননি। পরন্তু তঁহার অধীনস্থ ভূস্বামী বলে মেনে এসেছেন; আর পাটলিপুত্রের কাছে এক নির্দিষ্ট স্থানে তাদের আধিপত্য সীমাবদ্ধ ছিল। শ্রীগুপ্তের পুত্র ঘটোৎকচ, তাঁর পুত্র চন্দ্রগুপ্ত এবং তাঁর পুত্র সমুদ্রগুপ্ত ও পৌত্র দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত বহুরাজ্য জয় করে একটি বিশাল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

পঞ্চম অনুসন্ধানঃ

চন্দ্রগুপ্তের নানা উচ্চারণ দেখি। মহাপরিনিব্বাণ সুত্ত এবং থেরবাদী ধর্মগ্রন্থ অনুসারে ‘চণ্ড’, ‘কুন্ড’ নামক এক কামারের কথা জানতে পারি। কেউ কেউ মনে করেন ‘চণ্ড’ বা ‘কুন্ড’ গান্ধার অঞ্চলের এক প্রজাতন্ত্রের থেকে এসেছিলেন প্রাচীন স্ংস্কৃত সাহিত্যিক বিশখাদত্ত তার নাটকে চন্দ্রগুপ্তকে মৌর্যপুত্র ও নন্দজায়া হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন আবার অনেক মধ্যযযুগীয় সাহিত্য ধারায় তাকে নন্দ বংশের রাজপুত্র ও এক দাসীর পুত্র হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন বৌদ্ধ সাহিত্যে তাকে তিনি নেপালের তরাই অঞ্চলের এক প্রজাতন্ত্রের থেকে এসেছিলেন  
শ্রাবণবেলগোলায় এই পদচিহ্ন চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্যের বলে মনে করা হয়

ঘ) বাঙ্গালীরাই প্রাচীন মগধ সাম্রাজ্যের ধারক

পূর্ব ভারতে যে পাঁচটি জনপদের উল্লেখ আমরা মহাভারত পুরাণ ইত্যাদিতে পাই, সেই অঙ্গ বঙ্গ কলিঙ্গ পুণ্ড্র সুহ্ম কিন্তু অসুররাজ বলির পাঁচ সন্তানের নামে। এ থেকে বোঝা যায়, পূর্বভারতের এই পাঁচটি পরস্পর সম্পর্কিত ক্ল্যান একটা কমন, শেয়ারড ইতিহাস বহন করে (এদিকে কপিল সম্পর্কে বলা হয়, তিনি প্রহ্লাদের পুত্র ছিলেন, যদিও আরেকটি তত্ত্ব অনুযায়ী ঋষি কর্দম হলেন তাঁর পিতা। প্রহ্লাদের আরেক পুত্র ছিলেন বিরোচন, বিরোচনের পুত্র বলি। অর্থাৎ, মহর্ষি কপিল মহারাজ বলির কাকু বা জেঠু হতে পারেন)। সেই পূর্ব ভারতীয় সভ্যতা থেকেই প্রাচীন কালে মগধের উত্থান (দীনেশ সেন তাঁর বৃহৎ বঙ্গে বলছেন যে আমরা বাঙালিরাই সেই প্রাচীন মগধ সাম্রাজ্যের ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক)। নীহাররঞ্জন রায় জানাচ্ছেন যে একটি জৈন সূত্রে বঙ্গের সঙ্গে পাওয়া যাচ্ছে রাঢ় জনপদের নামও। অনেকেই মনে করেন বারাসাতের চন্দ্রকেতুগড়ে এই গঙ্গারিডিদের রাজধানী ছিল। কিছুদূরে, বর্তমান কলকাতা এয়ারপোর্টের উত্তরে গঙ্গানগরও সেই স্মৃতিবহন করে সম্ভবত, এখান দিয়ে বয়ে যাওয়া লাবণ্যবতী নদীতে একসময় প্রচুর নদীবাণিজ্য হয়েছে (বর্তমানে মজে যাওয়া নোয়াই খাল)। পূর্ব ভারতে গড়ে ওঠা প্রাচীন সভ্যতার এক অনন্য নিজস্বতা ছিল। সেই সভ্যতার উত্তরাধিকারী বাঙালি। বাঙালি সেই নিজস্বতা আজও বহন করে চলে।

এই মতের পক্ষে আরো দুটি আলেখ্যঃ    

পৌণ্ড্ররাজ্যের কোটিকপুরে (দেবকোট বর্তমানে) জন্মেছিলেন প্রসিদ্ধ জৈন ধর্মগুরু ও স্কলার ভদ্রবাহু, ইনি সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্যর গুরু ছিলেন। জৈন আচার্য্য ভদ্রবাহুর কাছে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্য আধ্যাত্মিক শিক্ষা লাভ করেন ও পরবর্তীকালে বিয়াল্লিশ বছর বয়সে সিংহাসন ত্যাগ করে জৈন ধর্ম গ্রহণ করে তাঁর সাথে দাক্ষিণাত্য যাত্রা করেন জৈন প্রবাদানুসারে, চন্দ্রগুপ্ত শ্রবণবেলগোলায় জৈন আচার সল্লেখনা বা স্বেচ্ছা-উপবাস করে দেহত্যাগ করেন
এই ভদ্রবাহুর শিষ্য গোদাম কর্তৃক বাঙালিদের মধ্যে তাম্রলিপ্তিকা, পুণ্ড্রবর্ধনীয়া, কর্ব্বটিয়া প্রভৃতি জৈন শাখার সৃষ্টি করা হয়। কর্ব্বটিয়া শুনে মনে হচ্ছে এই শাখাটি কেবট বা কৈবর্তদের নিয়ে সৃষ্ট হয়েছিল। সেক্ষেত্রে বাঙালিদের মধ্যে অন্যতম প্রাচীন জাত হিসেবে কৈবর্তদের দাবি আরও জোরালো হবে। ভদ্রবাহুর এক শিষ্য গোদাস এই গোদাস-গণনামক জৈন সম্প্রদায়টির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বঙ্গদেশে জৈন ধর্মের আগমন এদের মাধ্যমেই ঘটেছিল। এই গোদাস-গণসম্প্রদায়ের স্থানভিত্তিক চারটি শাখা ছিল, ‘তামলিত্তিয়বা তাম্রলিপ্তক’ (তমলুক, মেদিনীপুর), ‘কোডিবর্ষীয়অবা কোটিবর্ষীয়’ (দিনাজপুর), ‘পোংডবর্ধনীয়াবা পুণ্ড্রবর্ধনীয়’ (বগুড়া) ও দাসীখব্বডিয়বা দাসীখর্বটিক’ (সম্ভবতঃ মানভূম-পুরুলিয়া)।


প্রাচীন নগরী মগধ 

দ্বিতীয় আলেখ্য হল মুদ্রা বিষয়ক। মৌর্য্য রাজবংশের শাসনামলে ভারতবর্ষে রাজনামাঙ্কিত সুবর্ণ বা রজতমুদ্রার প্রচলন ছিল না; সেসময়য়ে পুরাণ নামক চতুষ্কোণ রজতখণ্ডই মুদ্রারূপে ব্যবহৃত হত। শ্রেষ্ঠী ও স্বার্থবাহগণ এই জাতীয় মুদ্রা প্রস্তুত করিত। মগধ ও বঙ্গের নানাস্থানে শত শত পুরাণনামক প্রাচীন রজতমুদ্রা আবিষ্কৃত হইয়াছে। ভারতবর্ষে যে সময়ে পুরাণব্যবহৃত হত, সেই সময়ে দুই জাতীয় তাম্র মুদ্রার ব্যবহার ছিল। প্রথম, বৃহৎ তাম্রখণ্ড এবং দ্বিতীয়, “ছাঁচে ঢালা” (cast) চতুষ্কোণ বা গোলাকার মুদ্রা। ভূতত্ত্ববিভাগের ভূতপূর্ব্ব চিত্রকর মৃত নৃপেন্দ্রনাথ বসু ২৪ পরগণা জেলার বসিরহাট মহকুমার অন্তর্গত বেড়াচাপা গ্রামের শেষোক্ত প্রকারের ছয়টি তাম্রমুদ্রা আবিষ্কার করিয়াছিলেন। তৎকর্ত্তৃক সংগৃহীত মুদ্রাগুলি এখন বঙ্গীয়-সাহিত্য-পরিষদের চিত্রশালায় রক্ষিত আছে। তমলুকেও এই জাতীয় একটি মুদ্রা পাওয়া গেছে। গত পাঁচ বৎসরে বাংলাদেশের নানাস্থানে এই মুদ্রা আবিষ্কৃত হয়েছে।
   
প্রাচীন গ্রীসের পর্যটক ও ভূগোলবিদ মেগাস্থিনিস সেলিয়াকাস ১-এর রাজকীয় দূত হিসেবে রাজা চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের (স্যান্ড্রাকোটাস) রাজদরবারে দায়িত্ব পালনের জন্য Pentapotamia দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন। সে সময় তিনি ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল ভ্রমণ করেন। তার সে অভিজ্ঞতার প্রকাশ ঘটেছে ইন্ডিকায়। তার বর্ণনায় নিঃসন্দেহে প্ৰমাণিত হয় বাংলার রাজাই সমধিক শক্তিশালী ছিলেন এবিং প্রাচীন মগধ সাম্রাজ্যের ধারক ও বাহক। ব্যাপারটা আমাদের জন্য দারুণ গৌরবের।   

ঙ) বাঙালির নিয়তির একটা আশ্চর্য বৃত্ত

গুপ্তসাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা শ্রীগুপ্ত বাঙালি ছিলেন, আর শশাঙ্ক গুপ্তবংশীয় প্রমাণ হলে গুপ্তবংশের ইতিহাসের, বাঙালির নিয়তির একটা আশ্চর্য বৃত্ত সম্পূর্ণ হয়। সাংখ্যের প্রকৃতি-পুরুষ বললে খুব বিমূর্ত একটা ব্যাপার, কিন্তু কালী-শিব, রাধা-কৃষ্ণ বললে তৎক্ষণাৎ সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার মধ্যে চলে আসে। শশাঙ্ক এইজন্য গুরুত্বপূর্ণ। শশাঙ্ক বাঙালি গর্বের মূর্ত প্রতীক।
গৌড়সম্রাট শশাঙ্ক গুপ্তবংশের সঙ্গে সম্পর্কিত ছিলেন, অনেকে মনে করেন। এব্যাপারে সবথেকে বেশি বিস্তারিত লিখে গেছেন রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। তার ঐতিহাসিক উপন্যাসে শশাঙ্ককে দেখিয়েছেন শেষ গুপ্তসম্রাট মহাসেনগুপ্তের পুত্র হিসেবে।
বিখ্যাত ভারততাত্ত্বিক ব্যুহলার (Beuhler)কে উদ্ধৃত করে রাখালদাস বলছেন যে হর্ষচরিতের একটি পুঁথিতে রাজ্যবর্ধন নিহন্তার নাম লেখা আছে নরেন্দ্রগুপ্ত। উপরন্তু হর্ষচরিতের টীকাকার ওই গ্রন্থের ষষ্ঠ উচ্ছ্বাসের টীকায় শশাঙ্কেরই যে অপর নাম ছিল নরেন্দ্রগুপ্ত সেকথা লিপিবদ্ধ করে গেছেন, রাখালদাস যোগ করছেন। ১৮৫২ সালে যশোরের মহম্মদপুরে আবিষ্কৃত গুপ্তযুগীয় প্রচুর রজতমুদ্রার সঙ্গে তিনটি স্বর্ণমুদ্রা পাওয়া যায়, তার মধ্যে একটি সরাসরি শশাঙ্কের স্বর্ণমুদ্রা বলে চেনা যায়, অপরটি গুপ্তবংশীয়, তিন নম্বরটিতে শ্রীনরেন্দ্র বিনতলেখা আছে। রাখালদাস বলছেন, কারও কারও মতে, ও মুদ্রাটিতে খোদাই অক্ষরের প্রকৃত পাঠ নরেন্দ্রাদিত্য। গুপ্তবংশীয় সম্রাটেরা এরকম আদিত্যান্ত নাম নিতেন, যেমন চন্দ্রগুপ্ত বিক্রমাদিত্য, কুমারগুপ্ত মহেন্দ্রাদিত্য, স্কন্দগুপ্ত বিক্রমাদিত্য, নরসিংহগুপ্ত বালাদিত্য, চন্দ্রগুপ্ত দ্বাদশাদিত্য।
আলেকজাণ্ডারের সৈন্য গঙ্গার তীরবর্তী  গঙ্গারিডি রাজ্যে

শশাঙ্কের রাজত্বের বহু সুবর্ণমুদ্রা আবিষ্কৃত হয়েছে। প্রথমভাগের মুদ্রাগুলো খাঁটি সোনার, পরের দিকের মুদ্রাগুলোয় সোনার ভাগ খুবই কমে গেছে এবং রূপোর পরিমাণই বেশি। নীহাররঞ্জন রায় ও দীনেশচন্দ্র সেন অনুমান করেছেন যে দীর্ঘকাল ধরে যুদ্ধবিগ্রহের ফলে শশাঙ্কের রাজকোষে টান পড়েছিল। 
মুর্শিদাবাদ সন্দেশ নামে একটি লিটল ম্যাগাজিনের ১৪০২ বঙ্গাব্দে প্রকাশিত শারদীয়া সংখ্যায় গবেষক যমুনা প্রসাদ মণ্ডল তাঁর প্রবন্ধে মুর্শিদাবাদের নবগ্রাম অঞ্চলে প্রচলিত শিব-চণ্ডীর পুজোর উৎসকাল খুঁজেছেন শশাঙ্কের রাজত্বকালের ৬৩৮ খ্রীষ্টাব্দে। অ্যাস্ট্রোনমির পদ্ধতি প্রয়োগ করে তিনি বলছেন যে ৬৩৮ খ্রীষ্টাব্দের মাঘ মাসে শুক্লপক্ষের সপ্তমী তিথিতে সূর্যের সংক্রমণ ঘটেছিল মকররাশিতে। এই সময়টি শশাঙ্কের রাজত্বের মধ্যে পড়ে, সম্ভবত তাঁর রাজত্বের শেষতম বর্ষ। শশাঙ্ক ছিলেন শৈবধর্মাবলম্বী।
চিত্তাকর্ষকভাবে গঞ্জাম তাম্রশাসনে মহারাজাধিরাজশশাঙ্ক চতুরুদধি-সলিল-বীচি-মেখলা-নিলীন-সদ্বীপ-গিরিপত্তনবতী-বসুন্ধরার অধীশ্বর বলে উল্লিখিত হয়েছেন, রমাপ্রসাদ চন্দের বইতে পাচ্ছি
শশাঙ্ককে নিয়ে বাঙালি যত মাতামাতি করেছে, আর কোনও রাজাকে নিয়ে এমন করেনি। করবে না-ই বা কেন? রাখালদাস থেকে শরদিন্দু, বাঙালি শশাঙ্কের নামে বারবার সাহিত্যকল্পনার রসদ খুঁজে পেয়েছে। বাঙালি জাতি, বাঙালির ইতিহাস বললে একটা অ্যাবস্ট্র্যাক্ট ধারণা, কিন্তু শশাঙ্কের নামোচ্চারণ করলে সেই ধারণা এক নিমেষের মধ্যে আমাদের উদ্দীপ্ত করে তোলে, উজ্জ্বল করে তোলে।

চ) একটা ভয়ঙ্কর আদি পাপের গল্প   

ভাই আপনাকে একটা ভয়ঙ্কর পাপের গল্প বলি। পাপটা আমি করেছিলাম। নিজের ইচ্ছায় করিনি। স্ত্রীর কারণে করেছিলাম। স্ত্রীর কারণে অনেক পাপ পৃথিবীতে হয়েছেমানুষের আদি পাপও রানী কিলিয়পেত্রার কারণে হয়েছিল। আপনাকে এইসব কথা বলা অর্থহীন। আপনি জ্ঞানী মানুষ, আদি পাপের গল্প আপনি জানবেন না তো কে জানবে। যাই হোক, মূল গল্পটা বলি।
আমি তখন মগধ রাজ্যে কানারে কাজ করি। গ্রামের নাম পওয়া। পওয়া গ্রামের লহার কাজে আমার সুখ্যাতি ছিল। নতুন বিবাহ করেছি। স্ত্রী সঙ্গে থাকেন। আমার বয়স তখন পনের-ষোল হবে। স্ত্রী নিতান্তই বালিকা। বার-তেরর মতো বয়স। আমরা সুখেই ছিলাম।
পওয়া গ্রামে তখন বুদ্ধের আস্তানা পাতলেন। কামারশালার কাছেই অনেকখানি জায়গা নিয়ে বুদ্ধের আশ্রম। আমার স্ত্রীর খুব শিব ভক্ত। সে পূজা অর্চনা আর তার যোগার যন্ত্র দিয়ে বাড়ী ভরে ফেলল। ও আচ্ছা, বলতে ভুলে গেছি। আমার স্ত্রী বুদ্ধেরও ভক্ত ছিল। সে প্রায় বুদ্ধের আশ্রম যেত।  
বুঝলেন ভাই সাহেব, আমার স্ত্রী বড় মায়বি। সে একদিন আদুরে গলায় আব্দার করল, আচ্ছা এক দিন বুদ্ধদেবকে দাওয়াত করলে ক্যামন হয়। শুনেছি কাউকে নিরাশ করেন না।
বুদ্ধের অবক্ষয় মূর্তি 

আমি যতই বোঝায় নিম্ন জাতের। আমাদের হাতের অন্ন গ্রহণ করবেন না। আমার স্ত্রী ততই ইনিয়েবিনিয়ে একই অনুরধ করতে থাকে। শেষে এক দিন বুদ্ধদেব বুদ্ধের আশ্রম গেলাম। প্রণাম করে দাওয়াত দিলাল।
আমার নিমন্ত্রণের কথা শুনে বুদ্ধের প্রিয় শিষ্য আনন্দ রেগে গেলেন। একে চন্দ সমাজের নিম্নবর্গ, তার উপর সে অচ্ছুত চন্ডাল গোত্রের অর্ন্তগত; সে কি খায় না খায় ... এই সমস্ত ভেবে বুদ্ধের শিষ্যরা বুদ্ধকে চন্দের নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে বারণ করিল বুদ্ধ তাদের নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করে নিমন্ত্রন রক্ষা করলেন।
বুদ্ধ আমাদের ঘরে এলেন। আমার স্ত্রী বুদ্ধকে খুব খাতির করে বালাম চালের ভাত আরশূকরমদ্দপ খেত দেয়
শূকরমদ্দপ খেয়ে আশ্রমে ফেরার কিছু পরে বুদ্ধ অসুস্থ হয়ে পড়েন। আর সুস্থ হননি। তাঁর কঠিন আমাশয় রোগ হয়। সেই রোগেই শেষমেশ মারা যান।       

ভাই সাহেব, বুদ্ধের মৃত্যুর কারণ আমি। এটাই আমার ভয়ংকর পাপের কাহিনী।

এই গল্পের সত্যতা পাই। অতীশ দীপঙ্কর বুদ্ধের অন্তিম জীবননামে একটি বই-এর ভূমিকায় লিখেছেন, ‘আমরা সকলেই জানি বুদ্ধ মহৎ ছিলেন কিন্তু বুদ্ধ কেন মহৎ ছিলেন বুদ্ধ কি এই জন্যেই মহৎ যে তিনি প্রাচীন ভারতীয় জনসমাজে নৈতিক সুবচন প্রচার করিয়া গিয়াছেন? মানবসমাজে নৈতিক সুবচন প্রচার করা এমন কি দুরূহ কার্য? মনুষ্যজাতির মধ্যে অনেকেই এরূপ করিয়া থাকে বুদ্ধের জীবনে কি এমন কোনও মহৎ ঘটনা নাই-যাহা স্মরণ করিয়া আমরা অভিভূত হইয়া যাইতে পারি? আছে বৈ কী বুদ্ধের জীবনের অন্তিম লগ্নে তেমনই এক বিস্ময়কর ঘটনা ঘটিয়াছিল বুদ্ধের তখন আশি বৎসর বয়স তৎকালে মগধে (প্রাচীন ভারতবর্ষের এক রাজ্যের নাম) চন্দ নামক এক ব্যক্তি বাস করিত নিম্নবর্গীয় চন্দ ছিল অচ্ছুত সে বুদ্ধকে তাহার গৃহে নিমন্ত্রণ করিল সেখানে তিনি শূকরমদ্দভ ভক্ষণ করেন।  
এই খাবার খাওয়ার পরে গৌতম আমাশয় দ্বারা আক্রান্ত হন চণ্ডের দেওয়া খাবার যে তাঁর মৃত্যু কারণ নয়, আনন্দ যাতে তা চণ্ডকে বোঝান, সেই ব্যাপারে বুদ্ধ নির্দেশ দেন ইহার জন্য বুদ্ধ চন্দকে দোষারোপ করেন নাই বরং তিনি মৃত্যু শয্যায় বলিয়া গিয়াছেন, জীবনে আমি দুই বার খাইয়া তৃপ্তি পাইয়াছি প্রথমবার সুজাতার পায়স; দ্বিতীয়বার, চন্দের শূকরমদ্দপ ...এই কারণেই আমি বলিতেছিলাম- বুদ্ধ কি এই জন্যেই মহৎ যে তিনি প্রাচীন ভারতীয় জনসমাজে নৈতিক সুবচন প্রচার করিয়া গিয়াছেন? না বুদ্ধ এই জন্যেই মহৎ যে তিনি মৃত্যুর সম্ভাবনা আছে জানিয়াও অচ্ছুত চন্ডাল চন্দ কে ফিরাইয়া দেন নাই, তাহার নিমন্ত্রণ রক্ষা করিয়া মৃত্যুর কোলে ঢলিয়া পড়িয়াছিলেন ... লিখতে লিখতে অতীশ ছোট্ট শ্বাস ফেললেন



ছ) সোনালী ইতিহাসকে আবছায়ায় রাখার অপরধ

চন্দ্রগুপ্ত একজন মানুষ যে নিজে হাতে অনেক যুদ্ধ করেছেন, অনেক মানুষ মেরেছেন  সে কেমন করে কবিতা লিখতে পারেন, আর কেমন করেই বা বীণা বাজাতে পারে্ন তা নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই। আসলে একটা মানুষের দুটো সত্ত্বা!  
বাংলাদেশের অতীত অধ্যায় মানেই নাটকীয় পালাবদলের ইতিবৃত্ত; হাঙ্গামা ও শান্তি, প্রাচুর্য ও দারিদ্র্যের এমন পিঠাপিঠি অবস্থান বিশ্ব-ইতিহাসেরই বিরল ঘটনা বাংলাদেশ কখনও সাংস্কৃতিক মহিমায় সমুজ্জ্বল, কখনও যুদ্ধক্লান্ত ও ধ্বংসোন্মুখ এই দেশের হুড়হাঙ্গামাপূর্ণ ইতিহাস অন্তর্দন্ধ, একের পর এক বহিরাক্রমণ এবং মহাপরাক্রমশালী সাম্রাজ্যের উত্থান ও পতনের সাক্ষী
আসলে পূর্ব থেকে পশ্চিমে সভ্যতা যেতে পারে, কোনও ইতিহাসবিদ সেটা ভাবতেই চান না৷ তাই অঙ্গ বঙ্গ কলিঙ্গ উপক্ষিত রয়ে গিয়েছে৷ শুঙ্গরা নির্দিষ্ট কোনও উপজাতি ছিল না, কিন্ত্ত তাদের উত্স পূর্ব ভারত৷ তারাই ছড়িয়ে পড়েছে গ্রিস পর্যন্ত৷ সেই প্রমাণও আমরা পেতে শুরু করেছি৷
চন্দ্রগুপ্তঃ যে অনেক যুদ্ধ করেছেনঅনেক মানুষ মেরেছেন আবার বীণা বাজাতেন 

প্রাচীন ভারতে এক আশ্চর্য মানবিক ঘটনা ঘটেছিল। পুন্ড্রনগর হয়ে উঠেছিল জৈন বুদ্ধ ধর্মের প্রধান কেন্দ্র এতে করে অহিংস বাঙালি মনের পরিচয় পাওয়া যায়
###

সাজেদুর রহমান
গণমাধ্যম কর্মী 
০১৯১২০৭৮৫৯৩

 sajedurrahmanvp@gmail.com

Comments

Popular posts from this blog

রাক্ষসী, ডাইনী আর যোগিনী পরিচয়ের বাইরে অন্যকিছু

পুণ্ড্রের পাঁচালী -৭ (নরবলির মন্ত্র )

পিশাচী সাজেদুর রহমান