পুণ্ড্রের পাঁচালী-২৪ (তেজস্বিনী-প্রথম পর্ব )


পুণ্ড্রের পাঁচালী-২৪ (তেজস্বিনী-প্রথম পর্ব )   
সাজেদুর রহমান
আদিবাংলা নারী

সেই অতীতের প্রথম অধ্যায়ে পাওয়া বিষয়টি ভাবলেই আজও আমি দুলে উঠি। চন্দ্রগুপ্তের কন্যা মহিষী প্ৰভাবতী ও ডামারী আর্য বিরধি সংগ্রামে সৈন্যবাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। সেই যুদ্ধে প্ৰভাবতী একটি পা এবং ডামারী একটি হাত হারান। প্ৰভাবতী এবং ডামারী তাঁদের বীরত্বের জন্যও স্মরণীয় হয়ে আছেন।
প্রাচীন বৈদিক যুগে নারীদের যুদ্ধক্ষেত্রে লড়াই করার আরও সাক্ষ্য আছে। প্রতিবাদ সাঁওতাল কইন্যা হিড়িম্বার, ক্রীতদাসী ধনপালি, চন্দ্রগুপ্তের মা মুরার অসাধারণ রণকৌশল জানত। চিত্রশিল্পী চিত্রলেখা, শিক্ষাগুরু ডাকিনীরা প্রমাণ করে প্রাচীন বাংলার নারিরা কতটা সৃজনশীল ও জ্ঞানী ছিল।
পুণ্ড্রের পাঁচালীর তেজস্বিনী পর্বে আদিবাংলা অপ্রতিরোধ্য-দুর্দমনীয়-বিধ্বংসী অথচ সহজ-সরল নারীদের চিত্র তুলে ধরব। অসাধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন নারিদের পরিচয় করিয়ে দেব নবরূপে, ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে সমকালীন সমাজের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে।  
সম্ভবত বৈদিক যুগ থেকে পাল আমল পর্যন্ত এই সব নারীদের কথা প্রায় অজানা।
পুণ্ড্রের পাঁচালীর ২৪ তম অধ্যায়ে তেজস্বিনী প্রথম পর্বে শুধুমাত্র পুণ্ড্রের সাত নারীকে নিয়ে কথা বোলব।
এমন চেয়ারে বসান হয় ধিনপালিকে       

ধনপালিঃ একজন বিদ্রোহী দাসীর কথা
দাসপ্রথার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার অপরাধে ধনপালি দাসীর খুব কঠিন শাস্তি দেওয়া হবে। কিশোরী গৃহপরিচারিকাকে রাস্তার মোড়ে আবর্জনা কুড়ানোর গাড়িতে করেতার মৃত্যুদণ্ড প্রদানের স্থানে নিয়ে যাবার নির্দেশ দেওয়া হয়। অতঃপর ফাঁসিকাঠটি স্থাপন করা হয় এমন এক জায়গায় যার পায়ের কাছে সেই আরাম কেদারাটি বসানো হয় যে কেদারায় বসে দাসী ধনপালি মানুষের স্বাধীন সত্ত্বার কথা বলেছিল।  
ঠিক সেই আরাম কেদারাতেই অভিযুক্ত দাসীকে বসানোর পর পুণ্ড্রের মহামাত্য আদেশে জল্লাদ তার ডান হাত কেটে ফেলে এবং ধনপালির সামনেই হাতটি ছুঁড়ে ফেলে জ্বলন্ত আগুনে। এর পরপরই ভোঁতা ছুরি দিয়ে তাকে উপর্যুপরি চারটি আঘাত করা হয়। প্রথম দুটো আঘাত জল্লাদ করে মেয়েটির মাথায়। তৃতীয় আঘাতটি করা হয় তার বাঁহাতের কনুই থেকে কব্জি বরাবর এবং চতুর্থ আঘাতটি করা হয় মেয়েটির বুকে। এটা করার পর, তাকে ফাঁসিকাঠে শ্বাসনালী রুদ্ধ করে ঝোলানো হয় যতক্ষণ না তার মৃত্যু ঘটে।
দুঘণ্টা পর তার মৃতদেহ সরিয়ে নেয়া হয় এবং বধ্যমঞ্চের ফাঁসিকাঠের পাদদেশে সেই ভোঁতা ছুরি দিয়েই মেয়েটির মস্তক তার ধড় থেকে আলাদা করা হয়। সবশেষে নগরের প্রধান দরজার বাইরে একটি বিশ ফুট উঁচু খুটিতে তার ছিন্ন মস্তকটি প্রদর্শন করা হয়। খুঁটিটি নগর থেকে করতোয়া নদীর বন্দরের দিকে যাবার রাস্তার নাগালে স্থাপন করা হয় যাতে সবাই এই কর্তিত মাথাটি দেখতে পায়। হতভাগ্য মেয়েটির অবশিষ্ট শরীর একটি বস্তায় পুরে ওই খুঁটির পাশেই মাটির দশ হাত গভীরে পুঁতে ফেলা হয়।
সবশেষে, নির্যাতন এবং মৃত্যুদণ্ড প্রদান প্রক্রিয়ার ধীরগতি, এর হঠাৎই আসা নাটকীয় মুহূর্তগুলো, দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির কান্না ও যন্ত্রণা যেন অপরাধীর অন্যায়ের চূড়ান্ত প্রমাণ হিসেবে মামলার শেষ পর্যায়ে আবির্ভুত হয়। প্রতিটি মৃত্যুযন্ত্রণাই একটি নির্দিষ্ট সত্যকে প্রকাশ করে। কিন্তু, যখন এই মৃত্যুযন্ত্রণা বধ্যমঞ্চের উপর অনুষ্ঠিত হয়, তখন এটা তীব্র আকার ধারণ করে। অপরাধীকে দেওয়া হয় কঠোরতর যন্ত্রণা। যেহেতু বধ্যমঞ্চের এই শাস্তি যেন সঙ্ঘটিত হচ্ছে খোদ মানবীয় বিচার ব্যবস্থা ও ঐশ্বরিক বিচার ব্যবস্থার এক মিলনবিন্দুতে। জনসমক্ষে এই শাস্তি প্রদর্শন করা হয় বলে লোকদেখানো আড়ম্বরও এতে থাকে বেশি। অভিযুক্ত ব্যক্তির যন্ত্রণা ইতোপূর্বেই তার উপর সঙ্ঘটিত তদন্তকালীন বিভিন্ন নির্যাতনেরই যেন বা সম্প্রসারণ।


সেই লোমহর্ষক কাহিনী গৌতম বুদ্ধের সময় কালে। বৌদ্ধ্য সাহিত্য অনুত্তরণিকা থেকে জানা যায় ধনপালি নামে এই হতভাগ্য নারী দাস-দাসীদের প্রতি অকথ্য অত্যাচার ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রকাশে কথা বলে ছিল।
তবে এই ঘটনার কিছুকাল পরে পুণ্ড্রে তথা সারা বাংলায় দাসপ্রথার কঠোরতা কমে গিয়েছিল। গৌতম বুদ্ধের শেষ সময় একজন দাস ইচ্ছা করলেই দাসত্ব থেকে নিজেকে মুক্তি দিতে পারত। তার মালিকও অনেক সময় তাকে স্বেচ্ছায় মুক্তি দিত। মৌর্য যুগে দাসপ্রথা প্রচলিত ছিল না বলে মেগাস্থিনিস যে মন্তব্য করেছিলেন, তা ভূল বলে প্রমাণিত হয়েছে।
দাসপ্রথার নৃশংস ইতিহাস আমাদের ইতিহাসের একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়। আজও গ্রামবাংলার মানুষের মুখে ফেরে ধনপালিদের লোমহর্ষক কাহিনী। তাদের নির্মম কাহিনী আমাদের অতীতের নগর সভ্যতার বিনির্মাণের একটা অংশ। ইতিহাসে অসংখ্য ভয়ানক ও অর্থহীন অত্যাচারের খবর পড়ে কে না কাঁপে? যে অত্যাচারগুলো ঠাণ্ডা মাথায় উদ্ভাবন ও প্রয়োগ করেছে যত দানব, যারা পরে সন্ত নাম নিয়েছে? তবে সেই বুদ্ধের যুগে পুণ্ড্রনগরীতে নারীদের অন্যরকম চিত্র পাই।
পুঁথির পৃষ্ঠা   

পুণ্ড্রনগরী নারীর সাতকাহন
   
পরিস্থিতিকে সহ্য করার অসাধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন চারিত্রিক দৃঢ়তা কিংবা বিপজ্জনক সব কাজে অভ্যস্ততা, বেপরোয়া, দুর্ধর্ষ পুণ্ড্রনগরীতে নারীদের কাহিনী বলতে- গেলে সুমাগধা, ধর্মসোমা, সথিসিহ (কোচ্ছা), সত্যা, লোলা, অবধারিকা ও প্রতিচ্ছদা নামের তর্ক শাস্ত্রে পারংগম নারিদের কথা চলে আসে।
এই নারিরা কেউ বুদ্ধের ধর্মে কেউ আবার জৈন ধর্মের আদি গুরুদের প্রত্যক্ষ স্নেহধন্য। গভীর বিস্ময়ে লক্ষ্য করি আড়াই হাজার বছর আগে এই বাংলার নারীরা যুক্তিসঙ্গত ভাবে তর্ক করতে পারে। এমনকি লব্ধপ্রতিষ্ঠ ঋষিকে তর্কে কোণঠাসা করে আশেপাশের মানুষদের নিজ মতকে প্রতিষ্ঠিত করছে।   

সুমাগধাঃ পুণ্ড্রনগরীতে নারীদের সামাজিক অবস্থান কতটা সম্মানজনক তা জানতে পারি সুমাগধা আক্ষানে। অনাথপিন্ডিকদের কন্যা সুমাগধার শ্বশুরবাড়ি পুণ্ড্রবর্ধনে। তার বাবার বাড়ি শ্রাবস্তী নগরে।        
শ্রেষ্ঠী অনাথপিন্ডিক ছিলে বুদ্ধের একনিষ্ঠ ভক্ত। বাবার কাছে থেকে ধর্ম শিক্ষার হাতেখড়ি। বৌদ্ধ ধর্ম বিশ্বাসী সুমাগধার বিয়ে হয় পুণ্ড্রবর্ধন রাজ্যের বৃষভদত্ত নামক এক নিগণ্ঠনাথপুত্রের অনুসারীর সাথে অর্থাৎ জৈনধর্মমতে বিশ্বাসীর সাথে।
ভিন্ন ধর্মমতে বিশ্বাসীর সংগসারে এসে সুমাগধা অপ্রস্তুত বোধ করলেও কাউকে বুঝতে দিলেন না। বুদ্ধিদীপ্ত এই নারি ভাবলেন স্বয়ং গৌতম বুদ্ধকে আনতে পারলে কেমন হয়। বুদ্ধ যদি আসেন তবে তার পরিবার শুধু নয় অত্র এলাকাও বৌদ্ধ ধর্মের প্রচার হবে।

একাদশ শতকের কবি ক্ষেমেন্দ্র রচিত বোধিসত্ত্বাবদান কল্পলতা (অনুবাদ-শরৎ চন্দ্র দাশ, কলিকাতা, ১৩৩৮, পৃ: ২৬৫-৭১) নামক গ্রন্থদ্বয় থেকে জানা যায়, এক সময় সুমাগধা ধ্যানযোগে বুদ্ধ প্রমুখ ভিক্ষু-সংঘকে নিমন্ত্রণ করলে তিনি পাঁচশত ভিক্ষু-শিষ্যসহ আকাশমার্গে পুড্রবর্ধন নগরে সুমাগধার শ্বশুর বাড়িতে উপনীত হন বুদ্ধের উপদেশ শুনে সুমাগধার শ্বশুরবাড়ির লোকজন বুদ্ধের নিকট দীক্ষা গ্রহণ করেন হিউয়েন সাঙ বলেছেন যে, বুদ্ধ দীর্ঘ ছয়মাস বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যথাক্রমে পুড্রবর্ধন (উত্তরবঙ্গ), সমতট (পূর্ববঙ্গ), তাম্রলিপ্তি (দক্ষিণ বা দক্ষিণ পশ্চিম বঙ্গ) ও কর্ণসুবর্ণ (পশ্চিমবঙ্গ) রাজ্যে ধর্মপ্রচার করেছিলেন

প্রাচীন বৈদিক যুগে নারীদের যুদ্ধক্ষেত্রে লড়াই করার দৃশ্য 

ধর্মসোমা ( কোচ্ছা) ও সথিসিহঃ ভারতের বাণগড় সম্পর্কে আরো একটি ঐতিহাসিক ঘটনা পাওয়া যায়। জানা যায় যে, খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ট শতাব্দীতে জৈন ধর্মের প্রবর্তক মহাবীর পুণ্ডদেশে এসেছিলেন ধর্মের প্রচারে।
এখানে এসে তিনি বেস বিব্রতকর অবস্থায় পরলেন। স্থানীয় অধিবাসীরা তাঁর ধর্ম দর্শনে মোটেই পাত্তা দিল না। তারা এই ধর্মাবতার পেছনে কুকুর লেলিয়ে দিল। অবস্থা এমন দাঁড়াল যে মহাবীরকে দেখলেই অধিবাসী ‘আতু-ছু-ছু’ বলে কুকুর ডাকত।
বেগিতি অবস্থায় মহাবীর কোটি বর্ষ নগরের অধিবাসী সুধর্মা নামে এক জনৈক ব্যক্তিকে দুঃখের কথা বললেন। শিষ্য সুধর্মা আবার এই নগরের অধিবাসী জম্বু স্বামী এক জনৈক ব্যক্তিকে জৈন ধর্মে দীক্ষিত করেন। এর পর দুই ভাই জয়সেন (সীহমিত্র) ও পুষ্যমিত্র এবং সার্থিবাহ কয়েকজনকে জৈন ধর্মে দীক্ষিত করেন।
কৌতুহলের বিষয় এই সব পুরুষেরা নগরের অধিবাসীর কাছে ধর্মে দীক্ষা দিতে পারছিল না। এমনকি তারা স্থানীয়দের নানা উপহার দিতে লাগলেন। কিন্তু কাজের কাজ হচ্ছিল না। এসময় সার্থিবাহপত্নী ধর্মসোমা বা শ্ৰমণদের গৃহস্থ শিষ্যা কোচ্ছা এবং জয়সেনের জৈন শিষ্যা সথিসিহ ধর্ম প্রচারে সফল হলেন। খুব অল্প দিনের মধ্যে জম্বু স্বামী নিগ্রধর্ম প্রচার করে এই অঞ্চলের মানুষের কাছে দেবতার আসনে বসেন। তবে মহাবীর পতিত রয়ে গেলেন।                                  
সৈন্যবাহিনীর নেতৃত্ব নারী 

সত্যা, লোলা, অবধারিকা ও প্রতিচ্ছদাঃ তর্ক শাস্ত্রে পারংগম এই চার নারীর ছিল নির্গ্রন্থ (জৈন) বিশ্বাসী। পরিবার থেকে এই শিক্ষা লাভ করে। তার বাবা-মা ও এক ভাই প্রচন্ড তার্কিক ছিলেন। তাদের পরিবার থেকে একটা নির্দেশনা ছিল কেউ যদি কারো সাথে তর্কে হেরে যায় তবে জয়ীকে বিয়ে (ভার্যা) করতে হবে। আর যদি জয়ী বেক্তি সন্ন্যাসী হয় তবে তাকেও তাই (প্রব্রজ্যা গ্রহণ) হতে হবে।
তো এক দিন চার বোন বৌদ্ধ ধর্মের অগ্রশাবক সারিপুত্রের সাথে তর্কযুদ্ধে নেমে পরে। এক পুরুষ বনাম চার নারীর মধ্যে প্রচণ্ড তর্ক যুদ্ধ চলে। যুদ্ধের এক পর্যায়ে বোন চতুষ্টয় হেরে বসে।        
ঐ চার বোন তর্কযুদ্ধ করে পরাজয় স্বীকার করে বুদ্ধের আদেশে উৎপলাবর্ণা থেরীর কাছে ভিক্ষুণীর দীক্ষা গ্রহণন করেন। পরবর্তীতে তারা প্রত্যেকেই অরহত্ত্ব মার্গফলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন। সত্যক ও সত্য পরিত্যাগ করে মিথ্যা দৃষ্টির বর্শীভূত হয়ে বাদ-বিবাদ তর্ক-বিতর্ক করে নিজের মত প্রতিষ্ঠা করতে চেষ্টা করত। তার মন অজ্ঞানান্ধারে আচ্ছন্ন হয়েছিল সে কিছু দিন বুদ্ধের শিষ্য হয়ে ভিক্ষু ছিল। কিন্তু ধম্মবিনয়ে শিক্ষা লাভ করে মার্গলাভ করার পূর্বে সে ভিক্ষুত্ব ত্যাগ করে পূনঃ জৈন ধর্মে ফিরে গেল। সে নানা ভাবে বুদ্ধের ও তার প্রচারিত ধর্মের নিন্দা করতে থাকে এবং বুদ্ধের ধর্মের অপব্যাখ্যা করে ধর্মকে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করে, বুদ্ধে ধর্মে কোন সার সত্য নেই বলে প্রচার করে।
জগৎ পূজ্য মহামানব গৌতম বুদ্ধ তাকে উপদেশ দিয়ে তার মনে প্রজ্ঞারুপ প্রদীপ জ্বেলে দিলেন। সে মিথ্যা দৃষ্টি লাভ করে। জয়মংগল অট্ঠগাথা, ভিক্ষু সত্যপাল সুত্র মতে, মৈত্রী বলে জয় করে বুদ্ধের সার সত্যকে বুঝাতে সক্ষম হয়েছেন।


    ডামারী যোদ্ধারা 

সমৃদ্ধ ইতিহাসের খেরোখাতা
যৌনশিক্ষা ব্যতীতই যে প্রাচীন বাংলার মেয়েরা কামকলায় অধিক পারদর্শী ছিল- কবির এ প্রবল আর্যবিরোধী বক্তব্য আমাদের দারুণ ভাবে শিহরিত করে। অথচ হাজার হাজার বছরের পুরনো উপাখ্যানের অংশবিশেষ, এর বিভিন্ন অনুষঙ্গ, চরিত্রের নাম ও অন্তর্নিহিত দর্শন বিশ্লেষণ করলে নারীর শাশ্বত রূপ খুঁজে পাই।
অর্থাৎ তার মধ্যে কতগুলো বিশেষ মানবিক গুণের সমাহারযেমন, দয়ামায়া, স্নেহ, সেবা, ক্ষমাশীলতা, ধৈর্য, সহ্যশক্তি ইত্যাদি, তেমনি দেখা যায় মারামারি, দাঙ্গাবাজি, খুন বা যুদ্ধে প্রায়শই নারীর সরাসরি অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকা, সেইসঙ্গে আবার কোনো কোনো নারীর ভেতর দেখা যায় কুটিলতা, জটিলতা, হিংসা, লোভ, প্রতিশোধস্পৃহার প্রবল উপস্থিতি।

মহাভারতের মতো কালজয়ী বিশাল গ্রন্থে বাংলার নারীর এই প্রগাঢ় অবমূল্যায়নে ক্রুদ্ধ, ব্যথিত ও সহানুভূতিশীল ছিলেন, এবং তাঁদের সৃজনশীল রচনাতে তা বারেবারে বিধৃত হয়েছে। অপর দিকে গ্রীকসহ আদি পুরানের ঘটনা ও চরিত্রগুলো আজকের গবেষকদেরও প্রবলভাবে আন্দোলিত করছে। তাঁরা পুরাণের আখ্যানকে, চরিত্রকে, বিশেষ করে নারীচরিত্রকে নবায়ন করছেন। আর তাই, যার আবেদন সর্বজনীন, চিরন্তন
আবহমান বাংলার বেশ কিছু নারী ছিলেন, যেমন খনা, কমলা, ডাকিনী, মায়া, যাঁরা যথেষ্ট বিদুষী ছিলেন। দর্শন রচনা ও চর্চা করতেন তাঁরা, জ্যোতিষ ও জ্যোতির্বিদ্যায় ছিলেন পারদর্শী, তাঁদের আয়ত্তে ছিল তীর-ধনুক চালনা, জাদুবিদ্যা, শিক্ষকতা ও গুরুর দায়িত্ব পালন করা। সাধারণ ও বিশেষ জ্ঞানে পুরুষদের সমকক্ষ ছিলেন তাঁরা এবং পুরুষদের সঙ্গে প্রকাশ্য সভায় বসে তাঁদের সঙ্গে আলোচনা, তর্ক-বিতর্কে অংশগ্রহণ করার উল্লেখ রয়েছে। তাঁদের কারো কারো বেশ কিছু শিষ্যও ছিল। ফলে আদিকালে নারীরা কেবল গুরুপত্নীই নন, সাক্ষাৎ গুরুও ছিলেন
###
সাজেদুর রহমান
গণমাধ্যম কর্মী 
০১৯১২০৭৮৫৯৩

 sajedurrahmanvp@gmail.com

Comments

Popular posts from this blog

রাক্ষসী, ডাইনী আর যোগিনী পরিচয়ের বাইরে অন্যকিছু

পুণ্ড্রের পাঁচালী -৭ (নরবলির মন্ত্র )

পিশাচী সাজেদুর রহমান